রোববার বিকেলে ১০ ইউপি সদস্যের পক্ষে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মাইন উদ্দিনের সই করা অনাস্থা চিঠি হস্তান্তর করা হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
অনাস্থাপত্রে ইউপি সদস্যরা উল্লেখ করেন, গত ৭ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুর রহমান। ৩১ জানুয়ারি তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম, অসদাচরণ করে আসছেন। পরিষদে কোনো সভাও করেননি। এরই মধ্যে এলজিএসপি-৩, পরিষদের উন্নয়ন সহায়তা, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ, টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি,নন ওয়েজ প্রকল্পের টাকা আতন্সাৎ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দসহ বিভিন্ন বরাদ্দে ইউপি সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত ও কোনো সভা না করে প্রকল্পের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া সইয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
ইউপি সদস্যরা আরও লিখেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচির ৮২ জন শ্রমিকের অনুকূলে ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রকৃত শ্রমিকদের নামে বিকাশ অ্যাকাউন্ট না খুলে নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে সে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া নন ওয়েজ প্রকল্পের কাজ না করেই ওই টাকািপিুরোটাই আত্নসাৎ করেন তিনি। একই অর্থবছরের টিআর, কবিখা, কাবিটা বরাদ্দের দুই কিস্তির ১০ লাখ টাকা নামমাত্র প্রকল্পে ব্যয় দেখিয়েছেন। কোনো ধরনের সভা ছাড়াই চেয়ারম্যান অবৈধ সুবিধা নিতে এডিপি খাতের ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রকল্প তালিকা দাখিল করেন। এছাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আদায় করা দুই লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে অনাস্থা পত্রে দাবী করেন।
১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাইন উদ্দিন বলেন, নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান অহিদুর রহমান। ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন সদস্য মিলে চেয়ারম্যানের নামে অনাস্থা জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। আমরা আশা করব, জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুর রহমান জানান, ইউপি সচিব মিজানুর রহমানের ইন্ধনে সদস্যরা ভুয়া অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত নই। প্রতিটি প্রকল্পে ইউপি সদস্যরা যুক্ত। তাদের অন্যায় আবদার রাখতে না পারায় তারা এসব ষড়যন্ত্র করেছেন। যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিচার চাই।
অহিদুর রহমান আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মিজানুর রহমান বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিব। এর আগেও লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি।
কোনো অনিয়মে জড়িত নন দাবি করে ইউপি সচিব মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের বিরুদ্ধে কারা কী অভিযোগ দিয়েছে, তা জানা নেই। তবে জেলা প্রশাসক বরাবর ইউপি সদস্যরা অনাস্থা দিয়েছেন বলে শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মে জড়িত নই।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে সদস্যদের অনাস্থা দেয়ার একটি আবেদনপত্র পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অন্যায়কারীকে ছাড় দেয়া হবে না।