রামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই প্রতারণার আশ্রয় সহ নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আতœসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের পূর্ব বিঘা তালুকদার বাড়ির আলী আজমের পুত্র সাইফুল ইসলাম এলাকায় তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা আখিকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে চাকুরিসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধশত ভুক্তভোগীর কাছ থেকে এই টাকা নিয়ে আতœগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত জুন মাস থেকে পলাতক রয়েছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আবু ইউছুপ বাদী হয়ে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী আখি ও পিতা আলী আজমসহ ৮জনকে আসামী করে লক্ষ্মীপুর আলাদতে একটি প্রতারনা মামলা করে। গত ৮ জুলাই মামলা দায়েরের পর পুলিশ সাইফুলের পিতা আলী আজমকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালে মুল হোতারা এখনো ধরাঁেছায়ার বাইরে রয়েছে। ফলে লেনদেনে প্রতারণা ও ভোগান্তির শিকার মানুষগুলো নানামুখি হয়রানি ছাড়া ও তারা এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রতারক সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন পলাতক থেকে ২০২১ সালের শেষদিকে হঠাৎ করে শারমিন সুলতানা আখি নামের এক মহিলাকে স্ত্রী পরিচয়ে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসে। থাকতেন ওই বাড়ির হাসান মিয়ার ঘরে। পরে অজ্ঞাত কারণে ঘর পরিবর্তন করে থাকতেন চাচা দুলাল তালুকদারের ভবনের ২য় তলায়। এরপর প্রতারক সাইফুল স্ত্রীকে ম্যাজিস্ট্রেট, শশুরকে হাইকোর্টের বিচারক, স্ত্রীর বড় ভাই আবদুল কাদেরকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এসপি, স্ত্রীর বড় বোন কামরুন্নাহারকে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের উপসচিব সহ যখন যা ইচ্ছা মনগড়া প্রভাবশালী পরিবারের ব্যাক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসতেন। চলাচলের গাড়িতে ব্যবহার করতেন ম্যাজিস্ট্রেটের স্টীকার, বিতরন করেন শারমিন সুলতানা আখি, অ্যাসিসস্ট্যান্ট কমিশনার ,এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ব্যাচ নং -৫, চট্রগ্রাম এরিয়া বাংলাদেশ, মোবাইল -০১৮১০৬৫৮৩২১ অফিস -০১৭২১০৬২৭১০ এ পরিচয়ের একটি ভিজিটিং কার্ড। কিছুদিন পরপরই বাড়িতে আসতেন এবং প্রতিবারই বাড়িতে আসলে ২ থেকে ৩ দিন থাকতেন এবং তৎকালিন রামগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের সাথে ও নানা কৌশলে সখ্যতা সহ সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। তার বাড়ীতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার তখন হরহামেশাই আসা যাওয়া ছিল। ঐ ঘরে কর্মকর্তাদের দাওয়াত ও ভোজনে অংশগ্রহন ছিলো প্রায় চোখে পড়ার মতো। অবস্থা দেখে আতংকে ছিলো এলাকার মানুষজরাও।
এভাবে কয়েক মাস আশা যাওয়ার মধ্যে এদিকে এলাকার মানুষরা ও তাদের বিশ্বাস করা শুরু করেন। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাইফুল তার চাচা দুলাল মিয়া, হাসান মিয়া,তার ভগ্নিপতি রাজু ও বন্ধু সোহাগ সহ কয়েকজনের মাধ্যমে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন সহ নানা কথা বলে আবু ইউছুফের কাছ থেকে ১২ লক্ষ, আল আমিনের কাছ থেকে ৬ লক্ষ, মোবাশ্বেরা আক্তারের কাছ থেকে ৫ লক্ষ, সুমনের কাছ থেকে ৬ লক্ষ , নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে ১২ লক্ষ সহ এভাবে অর্ধ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর হঠাৎ গত জুন মাস থেকে পলাতক রয়েছে। এ দিকে মানুষ চাকুরি আশায় দারদেনা ও সুদে টাকা দিয়ে চাকরিতো দুরের থাক ঋন ও দেনার দায়ে অনেকেই হয়ে পড়েন হতাশা গ্রস্থ ।
মামলার বাদী আবু ইউছুফ দাবী, সাইফুল স্ত্রীকে ম্যাজিস্ট্রেট ও তার আতœীয় স্বজনদের নামে স্বনামে দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিলে প্রথম এলাকার মানুষ তাদের বিশ্বাস করেনি। কিন্তু পরবর্তিতে গাড়ীতে ম্যাজিস্ট্রেটের স্টিকার, ভিজিং কার্ড থানার ওসি সহ প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনের আনাগোনা, দহরম মরম, আসা যাওয়া, আতিথেয়তা সহ বিভিন্ন বিলাসী কান্ডে সবাইকে তাক লাগানো কারণে এলাকার মানুষ তাদের বিশ্বাস করতে শুরু করে। পরে তার চাচা, বাবা, বোন, ভগ্নিপতি, বন্ধুর কথায় বিশ্বাস করে মানুষ চাকুরি প্রলোভনে পড়ে টাকা দেয়। সে অনেককে ভূয়া নিয়োগ পত্রও দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের আলোকে রবিবার(১৪ আগষ্ট) সকালে সরজমিন গিয়ে জানা যায় এবং প্রতারক সাইফুলের বাড়ির হাসান মিয়া জানায়, সে এলাকায় আসার পর প্রথমেই তাঁর ঘরেই ছিল। এর রামগঞ্জ থানার ওসিসহ প্রশাসনের লোকজনের আনাগোনায় এলাকার মানুষ একদিকে যেমন চমকে যায় অন্যদিকে তাদের প্রভাবিত কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে টাকা পয়সা দিতে থাকে। এতে আমিও তাকে বিশ্বাস করে আমার দুই ছেলের পুলিশে চাকরি জন্য ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছি সে ভূয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছে এবং তাদের দরদাম করে পাওয়ার টিলার গাড়ির জন্য ১৮ লক্ষ টাকা দিয়েছি। বাকী টাকা গাড়ি আসার পর মাসিক কিস্তিতে দিতে হবে। এ মর্মে গাজীপুরের একটা এজেন্টের চুক্তির কাগজপত্রও আমাকে দিয়েছে। এবং বলছে গাড়ি জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছে আসলেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর গাড়ি আসতে দেরি ও পুলিশের চাকরিও যোগদানের দেরি হওয়া আমি চাপসৃষ্টি করায় পরবর্তীতে ঢাকা থেকে এসে তার আপন চাচা দুলাল তালুকদারের ঘরে আশ্রয় নেয়। এরপর সন্দেহ হলে জুন মাসের প্রথমদিকে গাজীপুর গাড়ির এজেন্টে গিয়ে জানতে পারলাম কাগজপত্র সব ভূয়া। একইভাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে জানতে পারি ছেলেদের নিয়োগপত্র গুলো সম্পন্ন ভূয়া।
হাসান মিয়া আরো দাবী করেন, আমি সেখানে যাওয়ার পর তারা সাথে সাথে খবর পেয়ে রাজারবাগ থাকায় অবস্থায় সাইফুল ফোন দিয়ে তাকে খুব উত্তেজিত হয়ে বলল আপনার সকল কিছুই রেডি। তারপরও যখন আপনি সন্দেহ বাড়িতে আজই এসে আপনার সকল টাকা নিয়ে যান । আমি বাড়ি আসার পূর্বেই তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এরপর হইতেই তাহাদের সকল মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের আর কোনো খোঁজখবর পাইনি বলে জানান তিনি। এ দিকে প্রতারক সাইফুলের খালা রোকেয়া বেগম, খালু নুর মোহাম্মদ বলেন, সাইফুল ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ঢাকায় চলে যায় । এরপর বিদেশ গিয়ে প্রথমে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে। পরে বহু বছর দেশে আসে নাই। এবার স্ত্রীকে নিয়ে এসে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। থানার ওসিসহ প্রশাসনের লোকজনও তাদের খপ্পরে পড়ে সুর মিলায়। যার পরিনতি এলাকার মানুষকে এখন ভুগতে হচ্ছে। মানুষও বিশ্বাস করে তাদের টাকা পয়সা দিয়েছে। সর্বস্ব হারানোর পর এখন তাদের কেউই খোঁজ নিচ্ছেনা।
রামগঞ্জ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২১ সালের করোনাকালীন ঈদের পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ অফিসারগন ছুটিতে ছিল। তাই সাইফুল এরপূর্বেও এলাকায় একটি বিয়ে করে সেই স্ত্রী বাড়ির লোকজনের সাথে সংঘর্ষ চলতেছে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সাইফুলের পূর্বে স্ত্রীকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি । দাওয়াত খাওয়া ও ভোজন বিলাসী কান্ডের বিষয়টি সঠিক নয় ।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবীবা মীরা জানান, সাইফুল ও তার স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে চাকুরির কথা বলে সাধারন মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে বলে অনেকের কাছে শুনেছি,কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।