সাপাহারে মৌচাষে কোটি টাকার মধু বানিজ্যের সম্ভাবনা!

মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ন, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪

নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা হাঁপানিয়া গ্রাম। এই গ্রামে আদিগন্ত মাঠ জুড়ে ৩৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সরিষা। যতদূর চোখ যায় যেন হলুদের ছড়াছড়ি। সরিষা ফুলের অপরূপ দৃশ্য সত্যিই যেন মন কাড়ার মতো। আর এই সরিষা ফুলের সুমিষ্ট মধু সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে এসেছেন মৌচাষীরা। মাঝ মাঠে মৌবক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষীরা। চলতি বছরে মৌচাষে কোটি টাকার মধু বানিজ্যের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দেশের টাঙ্গাইল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারজন মৌচাষী এসেছেন উপজেলার হাঁপানিয়া ও কৃষ্ণসদা গ্রামে। মোট ৩৮০টি মৌবক্সে পৃথক দুটি স্থানে মৌচাষ করছেন তারা। এই এলাকার মাটির গুণগত মান অনেক ভালো। এখানকার সরিষা ফুলের মধু অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেকটাই সুমিষ্ট। যার ফলে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহের জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিয়েছেন তারা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছরে তুলনামূলকভাবে বেশি লাভবান হবার স্বপ্ন দেখছেন মৌচাষীরা। 

মৌচাষী জিয়াউর রহমান বলেন, আমি শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মধু সংগ্রহ করি। বর্তমানে এই জায়গায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় সরিষার চাষ অনেক বেশি। নদীর মাটিতে পলি থাকায় ফুলের মান ভালো। যাতে করে মধু অনেকটা সুমিষ্ট হবে আশা করছি। আমি ৭৫ টি মৌবক্স নিয়ে এসেছি। আরো মৌবক্স নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।

অপর মৌচাষী কামাল হোসেন মিঠু বলেন, আমাদের প্রতিটি মৌবক্সে ৮টি প্লেট থাকে। আমরা মোটামোটি দেড় মাসের মতো অবস্থান করবো। এই সময়ের মধ্যে ৫বার মধু সংগ্রহ করা হবে। প্রথমবার ও শেষবারে মধু তুলনামূলক কম সংগ্রহ হয়। কিন্তু মাঝের তিনবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মধু সংগ্রহ সম্ভব। এছাড়াও এই অঞ্চলের সরিষা ফুলের মান ভালো হবার ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মনে করছি। আমরা প্রতিকেজি মধু পাইকারী ৩শ’ ৫০ টাকা করে বিক্রয় করে থাকি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছরে এই অঞ্চলে মধু চাষ করে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে। 

অন্যান্য মধুচাষীরা বলছেন, আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৌচাষ করে মধু সংগ্রহ করে থাকি। যার জন্য অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়। আমরা এই মৌচাষ করি নিজস্বভাবে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা সহ উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে আমরা মৌচাষে আরো উন্নতি করতে পারি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার প্রামানিক জানান, বাইরে থেকে আসা চারজন মৌচাষীর মোট ৩৮০টি মৌবক্সে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন সম্ভব। যা ৩শ’৫০টাকা কেজি দরে বিক্রয় করলে দেড়মাসে প্রায় ১ কোটি  ৫ লাখ টাকার মধু বিক্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনিরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা স্থানীয়ভাবে মৌচাষী প্রশিক্ষণের পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই চার ইউনিয়নের চারজন কৃষককে  প্রশিক্ষণ শেষে মৌবক্স প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে বাছাই করে মৌচাষী বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।