কিশোরগঞ্জে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে মেরিন প্রকৌশলীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ,হাসপাতালে ভর্তি

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা-
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা- কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা-
প্রকাশিত: ১১:১৬ অপরাহ্ন, ০৮ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪

কিশোরগঞ্জে এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।  শারীরিক নির্যাতনের পর নগ্ন করে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগও করেছে ওই শিশু।  সুমাইয়া নামের এক মেরিন প্রকৌশলীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে ওই গৃহকর্মীটি।

শুক্রবার (৮ মার্চ) ওই শিশুর চাচা ওই নারীর বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি অভিযুক্ত ওই নারীর বাড়িতে দুই বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছে। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই শিশু সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর বড়বাগ গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত সুমাইয়া জেলা শহরের আলোর মেলা এলাকার বাসিন্দা মেরিন প্রকৌশলীর রাজিবের স্ত্রী। তবে সুমাইয়া জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকায় থাকেন।

গৃহকর্মী ওই শিশু বলে, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হইছে। পরে আমাকে দুই-তিনবার ডাক দিলে আমি শুধু উ উ করছি। পরে গিয়া পর্দার পাইপ দিয়া কতক্ষণ বাইরাইছে। আমি গেছি মুখ ধুইতাম। মুখ ধুইয়া আসার পর আমারে আবার মারছে। পরে আমার জামা-কাপড় খুইলা দরজার বাইরে নিয়া দাঁড় করাইয়া রাখছে।’

শিশুটি আরও বলে, ‘সকালে ভাত দিছে না। দুপুরে বাবুরে (সুমাইয়ার মেয়ে) কেন আপু আপু বলে ডাকি না তাই আবার মারছে। দুপুরবেলাও ভাত দিছে না। পরে না কইয়া পেটের খিদায় আমি বাসা থেকে বাইর হইয়া গেছি। দুই দিন, তিন দিন পরপর একটু কিছু হইলেই এইভাবে আমারে মারত।’

ওই শিশুটির বাবা বলেন, ‘দুই বছর হলো আমার মেয়ে সুমাইয়ার বাসায় কাজ করে। আমার মেয়েকে আগে প্রায়ই চড়থাপ্পড় দিত। এবার বেশি রকম মারধর করেছে। আমার মেয়েকে নির্যাতনের পর সুমাইয়া বলেছে, যদি তোমার মার কাছে কও, তাহলে শক্ত পিটনা দেব।’

শিশুটির চাচা বলেন, ‘আমার ভাতিজিকে গতকাল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চড়থাপ্পড় দেয়। সুমাইয়া আমার ভাতিজির মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে। এ ছাড়া দুই পায়ে রুটির বেলাইন দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ঘরে আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আমার ভাতিজি কৌশলে সুমাইয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে বাড়িতে চলে আসে। পরে রাতে তাকে আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিই।’

অভিযোগের বিষয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘ওই কিশোরী আমার বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় পালিয়ে গেছে। পরে কী হয়েছে তা জানি না। আমার বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তাকে যদি কাপড় খুলে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতাম তবে তা সিসি ক্যামেরায় থাকত। আমার ব্যাগ থেকে সে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। আমরাও এ বিষয়ে আইনের দ্বারস্থ হব।’

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক তানভীর রহমান বলেন, ‘শরীরের বাইরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে ধারণা করছি, মারটা থেঁতলানো। আর মেয়েটি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে, তাই বমি করেছে। কিছু পরীক্ষা দিয়েছি, রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত বলতে পারব।’

ওসি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই শিশুর চাচা। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’