রামগতি-কমলনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

রামগতি সংবাদদাতা-
রামগতি সংবাদদাতা- রামগতি সংবাদদাতা-
প্রকাশিত: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, ১৬ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ৬:২১ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এই পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুর হয়ে গেছে। গেল কদিন আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের আমেজ সৃষ্টি হওয়ায় ভোটাররা ও বেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে এ দুটি উপজেলা রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় ১০ নেতা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী এসব প্রার্থীরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে ফেসবুক ও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেও আগাম জানান দিচ্ছেন। অনুসারীরাও নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে জনগণের সামনে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন আলোচনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে।

তবে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কার জনপ্রিয়তা কেমন? অতীতে কে কেমন কাজ করছেন? কোন কোন প্রকল্পের টাকা আত্নসাৎ, জনগনের অধিকার নিয়ে ভৎসনা, হয়রানি, লুটপাট, আত্নসাতের জড়িত ছিল এ সব বিচার বিশ্লেষন নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। তবে দলীয় মনোনয়ন না থাকায় সহজ উপায়ে পাশ করা নেতারা এখন বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। তাই প্রার্থীর সংখ্যা ও বেশী। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিনক্ষন ঘোষনা এবং তফসিল ইতিমধ্যে অনেকটাই চুড়ান্ত হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে উপজেলার সর্বত্র নেতাকর্মী ও সাধারন সরব রয়েছে। তাই এই নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনায় সরগরম পুরো উপজেলা। তবে উপজেলা নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি অংশ নিবে কিনা- তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তাই এবারের প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।

বিএনপির কয়েক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচন এক নয়। তাই আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। এতে ধারণা করা হচ্ছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী দিতে পারে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে সব কিছু বলে জানান তারা। এ অঞ্চলটি মূলত বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত। সঙ্গে রয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশেরও শক্তিশালী অবস্থান।

এদিকে কমলনগর উপজেলায় রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) মার্কার দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান। দলটির শক্তিশালী ভোট ব্যাংক জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে! রামগতিতে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রবের শক্তিশালী সংগঠনও। সব মিলিয়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ।

আ.লীগ মনে করছে, বিএনপি-জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেবে না। আর এ কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রার্থী নির্বাচনে আসলে, আ.লীগ প্রার্থীর বিজয় অনেকটাই কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক হতে না হতেই প্রার্থীরা ও কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকায় ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সর্বত্র উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা-সমালোচনা।

নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কমলনগর উপজেলা এবং ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রামগতি উপজেলা। কমলনগর উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫৭৭। আর রামগতি উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৬ জন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কমলনগরে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মেছবাহ উদ্দিন বাপ্পি, যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্ল্যা হিরন, লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার, কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু, আব্দুর রহমান দিদার ও নুরুল আমিন অপি বাঘা।

এদিকে রামগতিতে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, রামগতি উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল ওয়াহেদ, উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ড. আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারু, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফত উদ্দীন আজাদ সোহেল ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবি আব্দুল্লাহ। তারা সবাই নির্বাচন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন কমলনগর উপজেলা সভাপতি মুফতী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতে আমরা স্থানীয় সকল নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, আর জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছি। উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের আলোকেই আমরা কাজ শুরু করবো।’

কমলনগর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু বলেন, ‘উপজেলা আ.লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দল এখন ঐক্যবদ্ধ এবং আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তাই এবারের নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

কমলনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, ‘দলীয়ভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের সিদ্ধান্ত পেলে উপজেলা নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। পরিস্থিতির আলোকে সবকিছু ক্লিয়ার হবে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেছবাহ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, ‘আমি গত ৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কারো উপকার করতে না পারলেও আমার কারণে কোনো মানুষের ক্ষতি হয়েছে- এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা। সব সময় এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের জন্য কাজ করেছি। মামলা-হামলামুক্ত কমলনগর গড়তে অতীতের ন্যায় এবারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।