উপজেলা চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবুর ব্যক্তিগত টাকায় ঘর পেল বৃদ্ধ মজিদ

ওবায়দুল হক শাওন   টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
ওবায়দুল হক শাওন টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি ওবায়দুল হক শাওন টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ন, ১৩ অগাস্ট ২০২১ | আপডেট: ৫:১২ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪



সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামের আবদুল মজিদের বয়স ৭০ বছর ছুঁই ছুঁই। এখনো  দিন এনে দিন খেয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সংসার চলে। বসত ভিটায় একটি ছাপড়া ঘর আছে। ঘরটির জরাজীর্ণ অবস্থা যা বসবাসের জন্য  অনুপযোগী। বৃষ্টি নামলেও বৃষ্টির পানি ওই জরাজীর্ণ ঘরের চাল চুয়ে চুয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে। এই বর্ষা মৌসুমে বৃদ্ধ দিনমজুর মজিদের পরিবারের সদস্যরা রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেন না। যেখানে আবদুল মজিদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে তাঁর জরাজীর্ণ ঘরটি সংস্কার করার জন্যও তাঁর কোন আর্থিক সহায় সম্বল নেই। 

সখীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি, বেতুয়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল হাসান বৃদ্ধ আব্দুল মজিদের দুরাবস্থার বিষয়টি সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবুকে অবগত করেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তি উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের আদলে আবদুল মজিদের ওই বাড়িতে শৌচাগারসহ পাকা রঙিন টিনের ঘর তৈরি করে দেন। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বহেড়াতৈল ইউনিয়নের বেতুয়া গ্রামে গিয়ে আবদুল মজিদকে ওই ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন। আবদুল মজিদ উপজেলার বেতুয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত বাহর আলীর ছেলে। তাঁর বাবাও আমৃত্যু মানুষের বাড়িতে কাজ করেছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সখীপুর আবাসিক মহিলা অনার্স কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান বলেন, আমার বয়স ৬০ পেরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। ছোটকাল থেকেই মজিদকে দিন মজুরের কাজ করতে দেখছি। তাঁর এ দুনিয়ায় এক শতাংশ জমিও নেই। অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করা দেখে গ্রামবাসী আবদুল মজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বাড়ি দাবি করেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু তাঁর পকেটের টাকা দিয়ে মজিদকে ওই আদলে একটি পাকা চৌচালা টিনের ঘর করে দেন। আবদুল মজিদকে ঘর করে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, আবদুল মজিদ প্রায় ৫০ বছর আগে একটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে ও এক ছেলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। প্রথম স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় বছর পঁচিশের আগে মজিদ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শেষ স্ত্রীর কোনো সন্তান হয়নি। দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে তাঁর একমাত্র ছেলে নবীন হোসেন বাবাকে ছেড়ে চলে যায়। নবীন বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামে বসবাস করছেন। বর্তমানে সে বিদেশে আছেন। একমাত্র ছেলে বাবার খোঁজ না নেওয়ায় আবদুল মজিদ কষ্টেই দিন যাপন করছেন। আবদুল মজিদ বলেন, আমি মরার আগে বিল্ডিং ঘরে শুইয়া যাইতে পারমু, জীবনেও ভাবি নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান ছারের (স্যারকে) আল্লায় যেন ভালা করে।

আজ বৃহস্পতিবার আবদুল মজিদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু, সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) চিত্রা শিকারী, সখীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল গফুর, বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফেরদৌস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এরশাদুল আলম, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেনুবর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান, স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রেনু বেগম প্রমুখ। 

সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে হাজার হাজার গৃহহীনদের পাকা ঘর উপহার দিয়েছেন। আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকারের ওই ঘরের আদলে একটি ঘর করে দিয়েছি মাত্র। আমার তেমন সামর্থ নেই। আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে আরও গরিব ও দুঃস্থ মানুষের সহযোগিতা করার।