লক্ষ্মীপুরে প্রতারণা ও জালিয়াতির দায়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা-
নিজস্ব সংবাদদাতা- নিজস্ব সংবাদদাতা-
প্রকাশিত: ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৩ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ৬:১৭ পূর্বাহ্ন, ০৬ মে ২০২৪

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব মান্দারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন (৩৫) ও কফিল উদ্দিন (৪৫) সহ এ দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন আদিলপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ভুমিহীন নুর হোসেন তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সদর আদালতে এ মামলাটি করেন।

জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভুমিহীন নুর হোসেনকে আটক ও জিম্মী করে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় সহ ওই স্ট্যাম্পে আবার নিজেদের ইচ্ছামতো মনগড়া গদ তৈরী করে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল করে নেয় বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় ভুক্তভোগী নুর হোসেন এ ঘটনার ন্যায় বিচার, প্রতিকার সহ তাঁর কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে নেওয়া অলিখিত স্ট্যাম্প আদায়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শিক্ষক দেলোয়ার মান্দারী আবদুস সাত্তারের ছেলে এবং কফিল উদ্দিন উত্তর দুর্গাপুর আহাম্মদ উল্ল্যা মাষ্টারের ছেলে বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী নুর হোসেন জেলা গনপূর্ত বিভাগের পেশ ইমাম ও অভিযুক্তরা উভয়েই পরস্পর প্রতিবেশী।

স্থানীয়ভাবে এবং সংশ্লিষ্টদের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসহায় ভুমিহীন নুর হোসেনের তেমন কোন সহায় সম্পত্তি না থাকায় কয়েক বছর আগে অর্থাৎ ২০১১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টিতে ১২৪ নং মান্দারী মৌজার ১ নং খতিয়ান ভুক্ত ২০৬৩ নং জমাখারিজ খতিয়ানের ৮২০৩, ৮২০৪, ৮২০৫, ৮২০৬ দাগে মোট ৮০ শতক সম্পত্তি বন্ধোবস্ত দেয় সরকার। বন্ধোবস্তে নুর হোসেনের স্ত্রীকে সমান অংশ দেয়া হয় বলে জানা যায়। বর্তমানে যার আনুমানিক মুল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

কিন্তু এই সম্পত্তির উপর প্রতিবেশী মামলার অভিযুক্ত এই দুই শিক্ষকের লফুপ দৃষ্টি পড়ায় শেষ পর্যন্ত রেহাই পায়নি ভুক্তভোগী নুর হোসেন ও তার পরিবার। সম্প্রতি বেশ কিছু টাকার প্রয়োজনে শিক্ষক দেলোয়ারের খোঁজে জেলা আইনজীবি সমিতির ২য় তলায় জনৈক আইনজীবির ২০৬ নং কক্ষে গেলে পূর্ব পরিকল্পনামতে অভিযুক্তরা কয়েকজন মিলে নুর হোসেন ও তার পরিবারকে জিম্মী করে ৮ অলিখিত সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। এবং সহায়তা নামক নগদ ৫০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে পরে লোকচক্ষুর আড়ালে ভুমি বন্ধোবস্তের ১৩ নম্বর শর্ত ভঙ্গ করে ওই স্ট্যাম্পে প্রতারণা এবং জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দুই শিক্ষক নিজেদের ইচ্ছামতো ও মনগড়া যা ইচ্ছে তা লেখে ও গদ তৈরী করে নেয়। বেশ কিছুদিন পর অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক বন্ধোবস্তকৃত পুরো সম্পত্তি নিজেদের দাবী করে দখলে নেয়। খবর পেয়ে এতেই দুঃশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে ভুমিহীন নুর হোসেন ও তার পরিবারে মাঝে। শেষ আশ্রয় নিতে হয় আইনের। কিন্তু সেখানে ও বাধ সাধে অভিযুক্ত এই দুই শিক্ষক। মামলা প্রত্যাহারে প্রতিনিয়ত অব্যাহত হুমকি ধমকিতে অজানা আতংকে স্বপরিবার নিয়ে জীবনের নিরাপত্তায় শংকায় রয়েছে বলে জানায় ভুক্তভোগী নুর হোসেন ও তার পরিবার। ফলে নিরাপত্তা ও প্রতিকার চেয়ে শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সদর নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের দফতরে আবারো লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান নুর হোসেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, জমি ক্রয় করে তরা দখলে গেছেন। বরং উল্টো নুর হোসেনকে প্রতারক দাবী করে তার শাস্তি চান তারা। তবে বন্ধোবস্তের শর্তানুযায়ী জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়, কিভাবে তা রেজিষ্ট্রি করে দখলে গেলে এমন প্রশ্নউত্তরে জানান, কোর্ট এফিডেভিট করে দখল বুজে নিয়েছেন তারা। আর বিএনপির নেতা শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন এ নিয়ে মিডিয়া কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়ায় সাংবাদিকদের উপর বেজায় বিরক্ত ও ক্ষোভ প্রকাশসহ বাজে মন্তব্য করতে ছাড়েননি তিনি।

অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুর রহমান জানায়,বন্ধোবস্তকৃত জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়। শর্তভঙ্গের দায়ে উভয়েই অভিযুক্ত। ফৌজদারী অপরাধে কারো বিরুদ্ধে মামলা বা সরকারি কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযুক্ত হলে চাকুরী বিধিমালায় শাস্তি যোগ্য বলে বিবেচিত। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা।

এদেিক ইসমাইল খান নামের অপর এক ব্যাক্তি জমির মালিকানা দাবী করে জানান, তাঁর আদালতের রায় রয়েছে। রায় বাস্তবায়নে  আদালতে আরেকটি মামলা রয়েছে। তা সত্ত্বে ও দুই শিক্ষক স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলে গিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন। তিনি ও জবরদখল এবং বিচালয়েকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের জন্য এদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার দাবী করেন।