পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন : ৪০০ পুলিশকে বিপিএম-পিপিএম পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা-
বিশেষ সংবাদদাতা- বিশেষ সংবাদদাতা-
প্রকাশিত: ৯:৩৯ অপরাহ্ন, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | আপডেট: ৯:৩৯ অপরাহ্ন, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনে ৪০০ পুলিশকে বিপিএম-পিপিএম পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন তিনি। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার সর্বাধিকসংখ্যক ৪০০ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ৬০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামলূক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ২১০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ পদকে ভূষিত করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামলূক ভাষণও দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন করবেন। স্মার্ট পুলিশ স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪। বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে শুরু হলো এবারের পুলিশ সপ্তাহ।

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪-এর বার্ষিক প্যারেডে কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি মো. সোহেল রানা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেবেন।

প্রতিবছরই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে পুলিশ। এবারও পুলিশের রয়েছে একগুচ্ছ দাবিদাওয়া। এসব দাবির মধ্যে অন্যতম পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে পদোন্নতি ও পদায়ন জটিলতা নিরসন, ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটির জন্য ওভারটাইম ভাতা ও পরিদর্শক থেকে তদোর্ধ্বদের জন্য ঝুঁকিভাতা প্রদান ইত্যাদি। পুলিশ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আন্তরিকতার সঙ্গে দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন। কিন্তু অধিকাংশই আশ্বাসে আটকে থাকে।

পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে আলাপ করে জানা গেছে, এবারের দাবিদাওয়ার মধ্যে আরও রয়েছে রেঞ্জ কার্যালয়ে এলআইসি ইউনিট, মোবাইল ট্র্যাকার ও ক্রাইম সিন ভ্যান দেওয়া, বাদী ও সাক্ষীদের ভাতা দেওয়া, বিদেশি মিশনে লেবার অ্যাটাচে পদায়ন, বিভাগীয় সদর দপ্তরে মাদকসহ আলামত পরীক্ষাগার নির্মাণ, আইজিপি পদকে চিফ অব পুলিশ করা, থানায় বিট পুলিশিং পরিদর্শক পদ সৃষ্টি করা, প্রতিটি বিভাগে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন, শ্রম আইন প্রয়োগ ও শ্রমিক মালিকদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে শিল্প পুলিশকে এ-সংক্রান্ত বিচারিক কাজে অন্তর্ভুক্ত, ট্রাফিক ভাতা বৃদ্ধি, রেশনের চাল ও পোশাকের মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

এ ছাড়া রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা, গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ঋণ ও পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝুঁকিভাতা, নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের জন্য সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জট কমানোসহ পুরোনো দাবিগুলো ফের তুলে ধরা হবে।

পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, এবার পুলিশ সপ্তাহে যারা সুপার নিউমারারি পদোন্নতি পেয়েছেন, তাদের প্রেষণে নিয়োগের দাবি তোলা হবে। আগের মতো বিআরটিএ, পাসপোর্ট অধিদপ্তরে পুলিশ অফিসারদের প্রেষণে নিয়োগ, গ্রেড-১ পদসংখ্যা ৪টি থেকে ১০টিতে উন্নীতকরণের দাবি তোলা হবে।

এবারের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সব থেকে বড় দাবি পদোন্নতি জট নিরসন করা। এজন্য সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়ে সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দিচ্ছে, কিন্তু এটা নিয়মিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে বয়স ও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়ার দাবি থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ে অন্যান্য ক্যাডার অফিসারদের মতো পুলিশ অফিসাররা যেন পদোন্নতি পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সেখানে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যা সমাধানে মিশনগুলোয় পুলিশ অফিসারদের প্রেষণে লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগের দাবি করছি আমরা।

দাবি পূরণ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু আছে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পূরণ হচ্ছে না। কিন্তু ঝুঁকি ভাতার বিষয়টিও অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তবুও অন্যান্য সব ক্যাডারে পদোন্নতি দেওয়া হলেও পুলিশে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে জুনিয়র থেকে সিনিয়র পর্যায়ে হতাশা বিরাজ করছে।