জলদ্যুদের হাতে ২৩ নাবিক জিম্মি : নাবিকদের সঙ্গে কথা বললো পরিবারের সদস্যরা

বিশেষ প্রতিবেদক-
বিশেষ প্রতিবেদক- বিশেষ প্রতিবেদক-
প্রকাশিত: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৬ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ৫:৫১ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪

সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের সবাইকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পান নাবিকরা।

এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আবদুল্লাহ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিকাল ৪টার দিকে ভাইয়া জাহাজের স্যাটেলাইট ফোন থেকে কল করেছিল। এক মিনিটের মতো কথা বলেছে। সবাইকে অল্প সময়ের জন্য পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দিয়েছে তারা।’

আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘তাদের এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা হয়নি বলেই জানিয়েছে। তবে তাদের খাবার আর পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কিছুটা টেনশনে আছে। অনেক মানুষ খাবার আর পানি ব্যবহার করছে। এসব দিয়ে আর বড়জোর ১০-১২ দিন চলা যাবে। খাবার শেষ হয়ে গেলে জলদস্যুরা খাবার আনবে। তবে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা নিয়ে এখনও তারা চিন্তিত।’

জানা গেছে, এর মধ্যে সকাল ১১টার দিকে সোমালিয়ার স্থানীয় সরকারের নির্দেশক্রমে এমভি আব্দুল্লাহ নোঙর তুলে স্থান পরিবর্তন করেছে। বিকাল ৪টার দিকে আগের অবস্থান হতে ৪০ মাইল দূরে এসে নোঙর করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

জিম্মি জাহাজের নাবিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন মেরিন অ্যাকাডেমির ২৭তম ব্যাচের ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান। নাবিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত নাবিকদের বাসস্থান বা একোমোডেশন নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। তবে তাদের নেতাগোছের দুই-তিনজন পাইলট কেবিনে অবস্থান করছে, বাকিরা রাতে থাকছে ব্রিজ উইংয়ে বা ব্রিজের দুই পাশের খোলা ডেকে। এজন্য নাবিকরা ওদের স্টোররুম হতে চাদর, বালিশ ইত্যাদি সরবরাহ করেছে। পুরো জাহাজের সিকিউরিটি আপাতত ওদের হাতে। এজন্য জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান আর ৪৭ জন নিরাপত্তা প্রহরী বসানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ হতে নাবিকদের জাহাজের সাধারণ রুটিন মেনে চলার জন্য অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রুটিন মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। ইঞ্জিনিয়াররা তাই ইঞ্জিনরুমে স্বাভাবিক কাজ করার অনুমতি পেয়েছে। ইঞ্জিনরুমে ওরা কোনো পাহারা বসায়নি। ডেক অফিসাররাও তাই কার্গো হোল্ডের ৫৫ হাজার টন কয়লার তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। কয়লার তাপমাত্রা আর হোল্ডের অক্সিজেন নিয়ন্ত্রণ করলে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা কমে আসবে।’

আজ আরও ১০-১২ জন জলদস্যু জাহাজে যুক্ত হওয়ার কথা আছে বলেও জানিয়েছেন নাবিকরা। মোটামুটি ২৫-৩০ জন সব সময় জাহাজে অবস্থান করছে। আপাতত জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম তাদের সঙ্গে আনা দোভাষী। অন্যদের সঙ্গে শুধু ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কুশল বিনিময় হয়।

নাবিকরা জানিয়েছেন তারা কোনো ঝুঁকি নিচ্ছেন না। তাই কোনো ছবিও পাঠাচ্ছেন না। জলদস্যুরা যা বলছে তাই শুনছেন। এ কারণে জলদস্যুরাও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।

জিম্মি হওয়া জাহাজটি আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লাইনের মালিকাধীন জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। পথিমধ্যে জলদস্যুর কবলে পড়ে। মঙ্গলবার যখন জাহাজটিতে জলদস্যুরা হানা দেয়, তখন পর্যন্ত নাবিকদের জন্য ২৫ দিনের খাবার ছিল। আর পানি ছিল ২০০ টনের মতো। জিম্মি ২৩ নাবিকের পরিবারে স্বজনদের মধ্যে হাহাকার চলছে। স্বজনরা নাবিকদের যেকোনো মূল্যে জীবিত উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছেন।

জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ার পর গণমাধ্যমে জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের তৈরি হয়। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে কোম্পানির কোনো ধরনের ঘাটতি ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জাহাজটির মালিকানাধীন গ্রুপ কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যে এলাকা থেকে জাহাজটি ছিনতাই করা হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচল রুট।সোমালিয়া উপকূল থেকে অন্তত ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে ছিল জাহাজটি। আর সোমালিয়ান জলদস্যুদের তৎপরতার কারণে ভারত মহাসাগরের সোমালিয়া অঞ্চলের প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। সেই রেড জোন থেকে আরও প্রায় ৩০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে ছিল জাহাজটি। তাই নিরাপত্তার যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা সঠিক নয়।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাহাজটি বীমা করা আছে।’

জাহাজের নাবিকদের সর্বশেষ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জিম্মি ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। তারা সেহরি ও ইফতার করতে পারছেন। জলদস্যুরা এক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে আছে।’

জাহাজটির অবস্থান জানা সম্ভব হলেও মুক্তিপণ বিষয়ে জলদস্যুরা এখনও মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে দাবি করেন মিজানুল ইসলাম।

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কবির গ্রুপের ‘জাহান মনি’ নামের আরেকটি জাহাজ সোমালিয়ান জলদস্যুরা জিম্মি করেছিল। তখন ২৫ নাবিকসহ ২৬ জনকে উদ্ধার করেছিলেন কবির গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ শাহাজাহান। এবারও নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে গ্রুপটি।