লক্ষ্মীপুরের গণপূর্ত বিভাগ এখন দুর্নীতির অাঁখড়া

বিশেষ প্রতিনিধি-
বিশেষ প্রতিনিধি- বিশেষ প্রতিনিধি-
প্রকাশিত: ১১:১০ পূর্বাহ্ন, ০৮ জুন ২০২৪ | আপডেট: ৫:২৬ অপরাহ্ন, ২৬ জুন ২০২৪

লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগ এখন দুর্নীতির অাঁখড়ায় পরিণত হয়েছে।  অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আকতার হোসেন নানান চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।  এখানে যোগদান করার পর থেকে দপ্তরের বিভিন্ন মেরামত ও নির্মাণকাজ ওটিএম করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান করাসহ তার বিরুদ্ধে কাজের প্রাক্কলিক মূল্যের আগেই পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঠিকাদারদের জিম্মি করে ঠিকাদারের কাজ নিজেই করা সহ ঘুষ ও পিসি বানিজ্য   এবং নানা হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

তিনি লক্ষ্মীপুরে যোগদান করার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিকাংশ ওটিএম দরপত্র তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে লক্ষ্মীপুরের অনেক নামকরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সক্ষমতা থাকা সত্বেও তারা কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এছাড়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন অফিস করেন। দুপুর ১২টায় অফিসে এসে আড়াইটার দিকে অফিস ত্যাগ করেন। এ সময়ে তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে তিনি ঠিকমতো কথাও বলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠে বিএনপি-জামায়েত পরিবারে সন্তান মো. আকতার হোসেন নিজেও বিএনপি-জামায়েতের রাজনীতির সাথে জড়িত  বলে দাবি অনেকের। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারদের চাপদিয়ে তার সরকারি বাংলোয় কাজ করিয়ে বাসভবনকে হায়াইট হাউজ বানিয়ে নিয়েছেন।

জানা যায়, চলতি বছর লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের কোয়াটার ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেনের পছন্দের চাঁদপুরের ঠিকাদার বেলাল হোসেন। এই নিয়ে সাংবাদিকরা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ করেন। পরে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার করলে চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আজগর হোসেনের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের খবর পেয়ে দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন ওই দিন দপ্তরে অনুপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক জন ঠিকাদার বলেন, প্রতি বছর প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার এপিপি (মেরামতের) কাজ আসে। এ কাজগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী তার নিজস্ব কিছু ঠিকাদারের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বণ্টন করেন। অনেক তালিকাভুক্ত ঠিকাদার এসব কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি তিনি বেনামি ভাউচার করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন।

দপ্তরের বিভিন্ন মেরামত ও নির্মাণকাজ ওটিএম করে তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান করেন। তিনি কাজের প্রাক্কলিক মূল্যের আগেই পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেন। শুধু তাই নয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন প্রতিটি প্রকল্প থেকে ঠিকাদারদের জিম্মি করে তার দফতরের পিসির নামে ২৫ থেকে ৩০% কমিশন বানিজ্য করে কোটি কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে সর্বশান্ত করার অভিযোগ রয়েছে। 

এ ছাড়া ভুয়া প্রকল্পের নামে ও হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা।  অভিযোগ, অবৈধ সুবিধা নিয়ে কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদারকে নিয়মিত কাজ পাইয়ে দেন আকতার হোসেন। অন্য ঠিকাদাররা প্রতিবাদ জানালে অফিসের ভেতর তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। কাজ না দেওয়ার হুমকি দেন। আর এভাবে তিনি সরকারি অর্থ লোপাট করছেন। তার এসব কারণে লক্ষ্মীপুরের অনেক নামকরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সক্ষমতা থাকা সত্বেও তারা কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।


স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী বিভিন্ন দরপত্র গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট এবং জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ না করে তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। নিয়মের বাইরে গিয়ে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফ কিউ) করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এইসব বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকতার হোসেন বলেন, অভিযোগ হতে পারে। চলতে গেলে সবাইকে তো খুশি করতে পারি না। এখানে তো অনেক ঠিকাদার আছে, কার মনে কি আছে, সেটা তো বলতে পারবো না। যারা কাজ পাইনা তারাই অভিযোগ করে।