২২ বছরের মার্কেটিং পেশা-জীবনে শীর্ষস্থানীয় ১১টি কোম্পানির শীর্ষপদে কাজ করেন আশফাক

ডেস্ক রিপোর্ট
ডেস্ক রিপোর্ট ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, ২৬ জুন ২০২১ | আপডেট: ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪
মোঃ আশফাকুর রহমান।

মাত্র ২২ বছরের দুর্দান্ত পেশা-জীবনে শীর্ষস্থানীয় ১১টি কোম্পানির শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের কর্পোরেট অঙ্গনে রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন মেঘনা গ্রুপের এফএমসিজি ডিভিশনের চিফ মার্কেটি অফিসার Ashfaqur Rahman; তাঁর ডাকনাম আবীর। জন্ম, পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। সরকারি ল্যবরেটরি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি, তারপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন।

আশফাকুর রহমানের চাকরি জীবন শুরু হয়েছিল বহুজাতিক বাটা সু কোম্পানিতে ১৯৯৯ সালে। চার বছরে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তিনি যখন সেখানকার হোলসেল-এর রিজিওনাল ম্যানেজার, তখনি সুযোগ আসে স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ-এর বিক্রয় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের। তিনি জানান, ওই চাকরিটা পাওয়ার আগে পর্যন্ত আমি এফএমসিজি সেক্টরের খুঁটিনাটি কিছুই বুঝতাম/জানতাম না! কিন্তু যখনি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পেলাম, পুরো দুই সপ্তাহ বিভিন্ন মার্কেট চষে বেড়ালাম। তৎকালীন এফএমসিজি সেক্টরে কর্মরত কয়েকজন এস.আর, টিএসও, এরিয়া ম্যানেজার ও রিজিওনাল ম্যানেজারকে খুঁজে বের করে তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে হাতে-কলমে তাঁদের কাজের ধরন শিখলাম; এই সংস্কৃতির সঙ্গে যতখানি সম্ভব নিজেকে মানিয়ে নিতে সচেষ্ট হলাম, তারপর ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বিগত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরলাম। ফলে অবধারিতভাবে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে পিছনে ফেলে চাকরিটা পেয়েও গেলাম।

আশফাকুর রহমান সেখানে ছিলেন চার বছর। এরপর এসিআই কমোডিটি পণ্য বিক্রয় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আরো দুই বছর। সেখান থেকে চলে আসেন পারটেক্স গ্রুপের পার্টিকেল বোর্ড-এর বিক্রয় বিভাগের প্রধান হয়ে। তিন বছর থাকার পর আরএফএল-এর একটি অংশের নেতৃত্ব দেন।

বছরখানেকের মধ্যেই ডরিন গ্রপের সাতঘোড়া সিমেন্ট-এর বিক্রয় বিভাগের প্রধান হন। এরপরের দুই বছর গোল্ডেন হারভেস্ট-এর আইসক্রিম ব্লুপ-এর হেড অব সেলস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর বোম্বে সুইটস-এর জিএম হিসেবে দেড় বছর কাটিয়ে আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ-এর বিক্রয় বিভাগের প্রধান হন। সেখান থেকে পেপসি-তে যোগদান করেন। বর্তমানে মেঘনা গ্রুপের এফএমসিজি ডিভিশনের চিফ মাকেটি অফিসার (বেভারেজ) হিসেবে ১৭০০+ বিক্রয়-বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিগত ২২ বছরের পেশাগত জীবনের দিকে ফিরে তাকালে যে কারোরই মনে হবে- আশফাকুর রহমানের জন্মই হয়েছে শুধু সফলতার জন্য! বাংলাদেশের স্বনামধন্য ও সুপরিচিত ১১টি কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী এই কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব অন্তরঙ্গ আলাপনে এমন কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন ও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন- যা তরুণ প্রজন্মের পেশাজীবীদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় হতে পারে।

আশফাকুর রহমান আলোচিত ১১টি চাকরির মধ্যে তিনটির সন্ধান পেয়েছিলেন পেশাদার হেড হান্টার-এর মাধ্যমে। বাকি আটটি চাকরি জুটিয়েছেন নিজের কর্পোরেট নেটওয়ার্ক-কে কাজে লাগিয়ে। তার মানে কোম্পানি থেকে কী পেলেন, তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার চারপাশের পরিচিত সমাজে নিজেকে ঘিরে আওয়াজ তুলতে পারছেন কি না?

তিনি বলেন, আমরা যে কোম্পানিতে চাকরি করি, তার কাছে কখনো বড় হই না, বড় হতে হয় নিজের প্রচেষ্টা ও যোগ্যতায়। আপনি যত বড় পদে ঢুকবেন, তত বেশি ছাড় দেওয়ার মানসিকতা পোষণ করেই চাকরিতে টিকে থাকতে হবে, নইলে যখন-তখন ছিটকে পড়তে পারেন! চাকরি ছেড়ে চলে আসার সময় কোম্পানির চোখে ভালো নাও থাকতে পারেন, কিন্তু আপনি সত্যিকারের ভালো মানুষ হলে কিছু প্রাক্তন সহকর্মী আড়ালে-আবডালে আপনার প্রশংসাই করবে।

তাঁর মতে, সদ্য চাকরিতে ঢুকেই আগের সবকিছু হুটহাট বাতিল করে দেওয়া উচিত নয়। নতুন কোনো চাকরিতে যোগ দিলে সেখানে নিজের মতো করে কিছুই পাবেন না। প্রথমে নিজেকে ওদের মতো করে সাজিয়ে নিতে হবে; সোজা বাংলায় মেনে ও মানিয়ে নিতে হবে। ওদের একজন হয়ে ওঠার পর বাকি সবাইকে নিজের মতো করে গড়ে নিতে হবে। তবে লোহা গরম থাকতে থাকতেই দু’-চারটা ঘা দেওয়ারও প্রয়োজন আছে বৈকি (অর্থাৎ নিজের অবস্থানকে জানান দিতে হয়, নইলে হঠাৎ একদিন আপনিই ‘নাই’ হয়ে যেতে পারেন।

তিনি বলেন, কোনো চাকরিতে ঢোকার পরে অনেকেই কোম্পানির অতীতের ভুলগুলো নিয়ে অথবা অতীতে যাঁরা কাজ করে গেছেন, তাঁদের সমালোচনা করে মহামূল্যবান সময়ের ৮০% অহেতুক নষ্ট করেন। এটা সব থেকে বড় ভুল এই কারণে যে, বারবার পেছন ফিরে ভুলগুলো দেখলে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতি শ্লথ হয়ে যায়! পেছনের দিকে ফিরে সামনে দৌড়ানো যায় কি? ফেলে আসা দিনগুলোর ভুলের দিকে বড়জোর ১০% মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে যাতে সেই ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিলে একই ধরনের ভুল এড়ানো সম্ভব।

আশফাকুর রহমান বলেন, নেতা যেটা চাইবেন, আগে সেটা নিজেকে করে দেখাতে হবে। কাউকে পরিবর্তন করা যায় না, কেবলমাত্র নিজেকে বদলিয়ে অন্যকে বদলানোর পথ দেখাতে হয়। কোনো অবস্থাতেই নিজেকে over selling করা যাবে না। নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই বড় স্বপ্ন দেখাবেন, তবে তাতে যেন বাস্তবতার ছোঁয়া থাকে। আকাশ-কুসুম আওয়াজ দিয়ে চাকরিটা পেতে পারেন, কিন্তু বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। যা বলবেন (আগাম অঙ্গীকার করবেন), তার কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে।

বারবার পণ্য ও ব্যবসার ধরন বদল করেও সফল বিক্রয়শিল্পী আশফাকুর রহমান মনে করেন- পণ্য বা সেবা যেটাই হোক না কেন, বিক্রির ধরন অনেকাংশে একই। যেটুকু আলাদা, সেটা শিখে নিতে যোগ্যতমের বেশি সময় লাগে না! তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে কমোডিটি প্রোডাক্ট বলে আলাদা কিছুই নাই, সবই এফএমসিজি। একইভাবে নিজেকেও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। চাকরি করতে এসে কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না, হারালে নিজেকে আর খুঁজেই পাবেন না!

তিনি বলেন, বিক্রি তথা ব্যবসাকে গতিশীল রাখতে কিছুদিন পরপর যেমন পণ্যের রূপ (মোড়ক) বদলাতে হয়, এই কাজটা নিজের জন্যও করা উচিত। ভালো কিছু বই ও প্রশিক্ষকের সান্নিধ্য আপনাকে অনায়াসে সেই সুযোগটা তৈরি করে দিতে পারে। তাঁর মতে- চাকরি বদলের সময় পদবি ও বেতন দু’টোই বাড়িয়ে নিতে হবে। পদবি বাড়িয়ে নিতে পারলে বেতনও আপনাআপনিই বেড়ে যায়! সব সময় দেড়গুণ বেতন।