অবশেষে একসাথে-পর্ব:০২

কাজী ফরহাদ
কাজী ফরহাদ কাজী ফরহাদ
প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ন, ০৭ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, ০৬ মে ২০২৪

রাতুলের মা রেজিয়া খাতুন, মর্ডান মেয়ে। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করেন। রাতুল মায়ের সঙ্গে জীবন কাহিনী নিয়ে আলোচানা করে। তবে নীলার ব্যাপারে কিছু বলেনি বলে, তিনি রেগে গেলেন। নীলার সম্মুখে রেজিয়া খাতুন বললেন,
“তলে তলে ছেলে আমার এতকিছু করে ফেলেছে, অথচ আমি জানিনা। আজ আসুক বাসায়, তবে তার একদিন কী আমার একদিন।
রেজিয়া খাতুনের কথা শুনে রহমত আলী বলেন,
“আচ্ছা নীলা, কতোদিন যাবত তোমাদের রিলেশন?
পাশ থেকে নীলা মাথা নিচু করে বলে,
“এই তো চার বছর ধরে।
রহমত আলী রীতিমতো পাগল হয়ে বললেন,
“ওহ মাই গড! চার বছর যাবত রিলেশন, অথচ আমরা বাসার কেউ জানিনা।
নীলাকে প্রথম দেখায়, রেজিয়া খাতুনের ভীষণ পছন্দ হয়েছে। রেজিয়া খাতুন নিজের হাতের বালা নীলার হাতে পরিয়ে দেন। নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কী করছেন আন্টি?
নীলার কথায় রেজিয়া খাতুন মুচকি হাসেন। হাসি দেখে নীলা আবার বলে,
“হাসছেন কেন আন্টি?
“হাসছি এজন্য যে, আমার ছেলের বউ এখনো আমাকে আন্টি বলে।
এবার কিন্তু নীলাও হেসে ফেলল, তারপর বলে,
” আচ্ছা আমার হাতে এগুলো কেন পরিয়েছেন?

“আমার ছেলের বউ প্রথম আমার বাসায় এসেছে, আমি কী খালি হাতে ফিরিয়ে দেই।
“না আন্টি এগুলো রাখেন, বিয়ের পর না হয় পরিয়ে দিবেন।
নীলার চোখে পানি। চোখে পানি দেখে রেজিয়া খাতুন জিজ্ঞেস করেন,
“কী হয়েছে নীলা! কান্না করছ কেন?
নীলা চোখ মুছে, তারপর বলে,
“খুশিতে কাঁদছি মা।
“অলে বাবা লে আমার আম্মুটা। হইছে আর কান্না করতে হবে না। তোমার মা-বাবাকে একদিন নিয়ে এসো।

রাতুলের বোন ফারিহা, স্কুল থেকে বাসায় ফিরছে। বাসার ভেতরে এসে দেখে নীলা। চমকে যায় নীলাকে দেখে। কাছে গিয়ে বলে,
“এই নীলা তুই এখানে? আজ স্কুলে যাস নি কেন?
ফারিহা এবং নীলা ক্লাসমেট। কিন্তু নীলা জানত না রাতুল ফারিহার বোন। নীলাও বেশ অবাক হয়েছে ফারিহাকে দেখে। জিজ্ঞেস করে,
“এই ফারিহা তুই এখানে কেন?
ফারিহা হেসে বলে,
“আরে গাধী! এটা আমার বাসা। এই যে আমার লক্ষি মা এবং বাবা। আমার সব থেকে ভালো বন্ধু।আর আমার বড় ভাই রাতুল, আপাতত বাসায় নেই।
রহমত আলী এতক্ষণে মুখ খুলেছেন,
“ফারিহা তুই কী জানছ, রাতুল যে নীলাকে ভালোবাসে।
বাবার কথা শুনে ফারাহা অবাক হয়ে। কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে, তারপর বলে,
“না বাবা! ভাইয়া তো বলল কোনো রিলেশনে নেই।
রেজিয়া খাতুন বললেন,
“আমরাও সেটাই জানি। রাতুল কাউকে ভালোবাসে না। আজ যদি নীলা এসে না বলতো! তাহলে হয়তো অজানা থেকে যেতো।
সবার কথা শুনে, নীলা মনে মনে ভাবে, বাবারে বাবা! পুরো পরিবার আমার পক্ষে। তাহলে আর রাতুলকে হারানোর ভয় নেই।
রাতুলের বাসায়, রাতুলের মা-বাবা এবং বোনের সঙ্গে খানিকটা সময় আড্ডা দেয়। তারপর বাসায় ফিরে আসে। মনে মনে কল্পনার জগতে যায় নীলা। এই যেন রাতুল সামনে, সামনে এসে বলছে, ওগো কী করছ! বলেই আবার উধাও হয়। নীলা একা একা হাসে। ঘুমের ঘরে স্বপ্নে রাতুল আসে। কাছে এসে জড়িয়ে ধরে। কপালে চুমু খায়। হাত রাখে, কথা দেয়, কোথাও যেন হারিয়ে না যায়। ঘুম ভেঙে যায় নীলার, জাগ্রত হয়ে বুঝতে পারে, এগুলো স্বপ্ন ছিল।

রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসে ডিনার করছে, রহমত আলী হঠাৎ মুখ খুলেছেন,
“রাতুলের মা! মেয়েটিকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।
রেজিয়া খাতুন বললেন,
“আমারও পছন্দ হয়েছে! যথেষ্ট সুন্দরী মেয়ে।
“আমারও পছন্দ হয়েছে। নীলা ভীষণ ভালো মেয়ে। আমাদের ক্লাসের এক নাম্বার স্টুডেন্ট। বলল ফারিহা।
একটা মেয়ের প্রশংসা শুনতে শুনতে, একটা সময় রাতুল বলে উঠল,
“এই ফারিহা কার কথা বলছ! কাকে নিয়ে এত প্রশংসা করছ?
রাতুলের কথায় ফারিহা বলে,
“কেন নীলার কথা বলছি।
রাতুল অবাক হয়। তারপর জিজ্ঞেস করে,
“নীলাটা কে আবার?
রাতুলের কথা শুনে রেজিয়া খাতুন বললেন,
“হইছে ভাব নিতে হবে না।
মায়ের কথায় রাতুল প্রায় অবাক। জিজ্ঞেস করে,
“নীলা কে! আমি সত্যি জানিনা বলো তো কে?
রাতুলের কথা শুনে ফারিহা বলে,
“ভাইয়া এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? ওই যে আমার বান্ধবী, নীলা যার সঙ্গে তোমার রিলেশনশিপ।
“কী ফালতু কথা বলছিস, আমি আবার কবে তোর বান্ধবীর সঙ্গে রিলেশন করেছি। তাছাড়া আমি আজও সিঙ্গেল।
“আমি কী জানি, নীলা আজ বাসায় এসে বলল।
“আমি না কিছুই বুঝতে পারছি না। অপরিচিত একটা মেয়ে বাসায় এসে বলল, আমার সঙ্গে রিলেশন। আর তোমরা তার কথা বিশ্বাস করেছ। এই নীলা কোন মেয়েটা আমাকে একটু দেখাইছ তো।
“অপেক্ষা করো আমি ছবি দেখাচ্ছি।

চলবে…..